“হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করে আদমপুর”
১৫৬০খ্রিস্টাবে জীন ডি ব্যারোসের মানচিত্র
১৫৬২ খ্রিস্টাবে ম্যানশন ডি অবাবিলের মানচিত্র
সর্বশেষ ১৭৭৯খ্রিস্টাবদে মেজর রেনেলের জরিপ করা মানচিত্রে এখানকার অবস্থান দেখানো হয়েছে ।
(মানচিত্রটি ঢাকা বাংলা একাডেমীতে সংরক্ষিত রয়েছে )
১৫৭৫-৭৬ খ্রিস্টাবদে ভাটির প্রতিষ্ঠাতা ঈশা খা এখানে মোঘলদের প্রথমে বিরোদ্ধে গড়ে তোলেন ।
ঈশা খার সাথে মোঘল সেনাপতি যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল ।
এই স্থানটিতে প্রখ্যাত ইতিসাসিক মানসিং হের “হিট্রি” এই যুদ্ধ কে Baltle Of Kastul বলে অবহিত করেছেন আকবর নামা অনুযায়ী ।
১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মোঘল নৌ বাহিনীর প্রধান এডমিরাল খান জাহান নৌ যুদ্ধে ঈশা খা কে পরাজিত করে
ইতিহাসিক তৈফুরের ভাষায় “ In 1576 That Yaer Army Khan jahan Had Occupied Austagram By Defeating Ish Khan”
IN a Noval Baltle” In Kastul
ঈশা খার সাথে মোঘলদের যুদ্ধ ঐতিহাসিক ভাবে স্বীকৃত।
আদমপুর ইউনিয়নের ঐতিজ্য
লোকসংস্কৃতি, লোকউৎসব, লোকসংগীত, লোকগাঁথাঃ
লোক সংস্কৃতি,লোক উৎসব, লোকসংগীত, লোকগাঁথার দিক দিয়েেআদমপুর ইউনিয়ন হলো প্রসিদ্ধ। রয়েছে কাজল রেখা, সফর মুল্লুক, রুপবান, ইত্যাদি পালা।
তাছাড়া যাত্রাগান, গ্রামীণ কাহিনীর উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত নাটক ও যাত্রা আদমপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্য। আদমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত লোকসঙ্গীতগুলোর অন্যতম হলো বাউলগান, ভাটিয়ালী, কিস্সাপালা, কবিগান, কীর্তন, ঘাটুগান, জারিগান, সারিগান, মুর্শিদী, যাত্রা, বিয়ের গান, মেয়েলীগান, বিচ্ছেদী গান, বারমাসী, পুঁথিগান, পালকির গান, ধানকাটার গান, ধানভানার গান, হাইট্টারা গান, গাইনের গীত, বৃষ্টির গান, ধোয়া গান, শিবগৌরীর নৃত্য গীত, গাজীর গান, পটগান ইত্যাদি ।
প্রধানপ্রধানউৎসবঃ
নবান্ন: আদমপুর ইউনিয়নে সুদূর অতীত হতে নতুন ধান উঠা উপলক্ষ্যে নবান্ন উৎসব প্রতি ঘরে ঘরে পালিত হয়ে আসছে। অগ্রহায়ন মাসে নতুন ফসল ঘরে উঠানোর পর ঐতিহ্যবাহী খাদ্য পরিবেশনের নামই হলো নবান্ন। নবান্নে পিঠা পার্বণের সাথে সাথে পুরনো কিচ্ছা, কাহিনী, গীত, জারি এই সবকে উপজীব্য করে চলে রাত্রীকালীন গানের আসর।
পিঠাউৎসব: অগ্রহায়ন পৌষের শীতে নবান্নের পিঠা-মিষ্টি উৎসবের সময় আদমপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এক উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। নানা ধরনের পিঠার মধ্যে রয়েছে তেলের পিঠা, মেরা পিঠা, পাটি সাপটা, মসলা পিঠা, পুলি পিঠা, গুলগুল্যা পিঠা, দই পিঠা, ভাপা পিঠা, দুধ কলা পিঠা, চিতল পিঠা, খেজুর রসের পিঠা, নকসী পিঠা ইত্যাদি।
নববর্ষওমেলা:
আদমপুর ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে এখনও শহরের মতো বর্ষবরণের প্রচলন শুরু না হলেও অতি প্রাচীনকাল হতে এখানে বিরল অথচ লোকজ ঐতিহ্যের দাবী নিয়ে দীপশিখা জ্বালিয়ে বাংলা বর্ষ বিদায়ের এক নীরব আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হতো। মেলা উপলক্ষে মহিলারা বাপের বাড়ীতে নাইয়র আসত এবং মেলায় এসে ছোট বাচ্চারা খেলনা, বাঁশি, কিনতো। মেলায় বিভিন্ন রকম সার্কাস, দোলনা খেলা চলতো।
যাত্রাগান:
সাধারনত শীতকালে প্রাচীন লোককাহিনীর উপর ভিত্তি করে যাত্রার আয়োজন করা হয়। এই সব যাত্রা এবং যাত্রাগান কখনো কখনো রাতব্যাপী হয়ে থাকে। যেসব কাহিনী/বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যাত্রা হয় তমধ্যে কাজল রেখা, সফর মুল্লক, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং স্থানীয় ভাবে রচিত বিভিন্ন কাহিনী/উপাখ্যান অন্যতম।
পালাগান: আদমপুর পালাগানের আয়োজন হয় না বললেই চলে। তবে পূর্বে বিভিন্ন স্থানে পালাগানের আয়োজন করা হতো।
নৌকাবাইচ:
বর্ষাকালে নদী বা বড় বড় খালগুলি যখন পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তখন বিভিন্ন স্থানে নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতার আকারে আয়োজিত এসব নৌকা বাইচ অনুষ্ঠান স্থানীয় প্রশাসন এর সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়।
বিয়ে/জম্মদিন/বিবাহবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতাসংক্রান্তঃ
বাংলাদেশের অন্যান্য ইউনিয়নের মতোই সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই আদমপুর ইউনিয়নে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে জম্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী পালনের প্রচলন আগে তেমন না থাকলেও ইদানিং মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের মাঝে তা ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। বিয়েতে বরের পক্ষ থেকে বরযাত্রী যায় কনের বাড়ীতে। কনের বাড়ীতে বরযাত্রীদের গায়ে রং ছিটিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ বহুদিনের, এই নিয়ে ঝামেলাও কম হয় না। বরপক্ষের আনা জিনিস পত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি, সমালোচনা, রসাত্মক আলোচনা চলে কনে পক্ষের লোকজনের মধ্যে। খাওয়া-দাওয়া ও বিয়ে শেষে কনেকে বরের বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়, সেখানে মহিলারা অপেক্ষা করেন কনেকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য। পরের দিন বৌভাত অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত দুই-তিন দিন পর বর ও কনে মেয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যায়, যাকে ‘ফিরানী’ বলা হয়। কয়েক দিন সেখানে থেকে পুণরায় বর নিজের বাড়ীতে ফিরে আসেন।
প্রচলিত খেলাধুলা, খেলাধুলার বিবর্তন
পূর্বে এ অঞ্চলে প্রধান আমোদ প্রমোদ ছিল ঘুড়ি উড়ানো, নাচগান, লীলা ও তাস খেলা, নৌকাবিহার, পাশা খেলা, বানর লম্ফ, মোরগ লড়াই, দাড়িয়াবান্দা, কাবাডি, ক্যারম, গোল্লাছুট, দাবা, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, বৌচি ইত্যাদি। গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্দা, কাবাডি, মোরগ লড়াই ইত্যাদি খেলার স্থান ক্রমে দখল করে নিয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলা। প্রযুক্তির উন্নতির দরুন টেলিভিশনের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ফুটবল ক্রিকেট খেলা গ্রাম ও শহরে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই আজ বেশিরভাগ মাঠই দাড়িয়াবান্দা, হা-ডু-ডু, বৌচি, গোল্লাছুট ইত্যাদির পরিবর্তে ক্রিকেট বা ফুটবল দখল করে নিয়েছে। তবে গ্রামে এখন ও বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে গোল্লাছুট, বৌচি ইত্যাদি প্রচলিত রয়েছে।
খাদ্যভ্যাস, মিষ্টি-মিঠাই-পিঠা, স্থানীয় বিশেষ খাবারঃ কাস্তুল ইউনিয়নের গ্রামীণ উৎসব ও মেলায় নানা ধরনের ও বৈচিত্রে ভরপুর সৌখিন খাদ্যবস্তু পরিবেশন করতে দেখা যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে মিষ্টি, নিমকি, খাস্তা, মুড়ির মোয়া, চিঁড়ার মোয়া, খৈ এর মোয়া, তিলের খাজা, কদমা, গজা, কটকটি, হাওয়াই মিঠাই ইত্যাদি। সকাল-এ ভাত/খিচুরী/রুটি, দুপুরে ও রাতে ভাত খাওয়ার প্রচলন দেখা যায়। তবে ‘জাউ’ এ অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় খাবার বিশেষ করে অস্বচ্ছল বা গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে। মিষ্টির মধ্যে রয়েছে, কাস্তুল বাজারের আকাশের মালাই-দবী কারী, কালোজাম, রসমালাই, এবং গুড়ের সন্দেশ ইত্যাদি।
জাতিগত/আঞ্চলিক/ভৌগোলিকবিশেষঅনুষ্ঠানমালাঃ এ ইউনিয়নে বসবাসরত বিভিন্ন লোকজন তাদেরনিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা পালন করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতন এ ইউনিয়নের লোকজন বৈশাখী মেলা, ঈদ উৎসব, দূর্গাপূজাসহ অন্যান্য উৎসব জাকজমকের সাথে উদযাপন করে থাকেন। এসব অনুষ্ঠানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, নির্মল ভ্রাতৃত্ববোধ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অন্যকে জানার স্পৃহা ও আগ্রহভরা অংশগ্রহণ।
আদমপুরের সামাজীকতা/সংস্কার/কুসংস্কার/প্রচলিতধ্যানধারণাঃ
অতিথিপরায়ণতা এ ইউনিয়নের একটি উল্লেখযোগ্য রীতি। ধনী গরীব নির্বিশেষে আপ্যায়ন বা মেহমানদারীর রীতিটি সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। মুসলমানদের মধ্যে ২ ঈদ ধর্মীয় উৎসবসমূহে আত্মীয়দের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া, নতুন কাপড় পরিধান করা, ভাল খাবার তৈরী করা ও অপরকে দাওয়াত করে খাওয়ানো, ঘনিষ্ঠদের নতুন কাপড় উপহার দেয়া ইত্যাদি রীতি অন্যান্য অঞ্চলের
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস